বিষয়বস্তুতে চলুন
উইকিপিডিয়া একটি মুক্ত বিশ্বকোষ

রাজর্ষি (উপন্যাস)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
রাজর্ষি
লেখকরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
দেশভারতবর্ষ
ভাষাবাংলা
প্রকাশকবালক পত্রিকা
প্রকাশনার তারিখ
১২৯৩ বঙ্গাব্দ ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দ
পূর্ববর্তী বইবউ-ঠাকুরানীর হাট 
পরবর্তী বইচোখের বালি 
রাজর্ষি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

রাজর্ষি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর একটি ঐতিহাসিক উপন্যাস । উপন্যাসটি মানবতার পক্ষে ধর্মীয় কুসংস্কার এর বিরুদ্ধে ।পরবর্তীতে এ উপন্যাস এর উপর ভিত্তি করে রচিত হয় তার বিখ্যাত নাটক "বিসর্জন"

রচনার ইতিহাস

[সম্পাদনা ]

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বালক অধ্যায়, জীবনস্মৃতি তে তার রাজর্ষি উপন্যাস রচনা সম্পর্কে বলেন-

ছবি ও গান এবং কড়ি ও কোমল এর মাঝখানে বালক নামে একখানি মাসিক পত্রিকা এক বৎসরের ওষধি গাছের মত ফল ফলাইয়া লীলাসম্বরণ করিল । ... দুই এক সংখ্যা বাহির হইবার পরে এক-দুইদিনের জন্য দেওঘরে রাজনারায়ণ বাবুকে দেখতে যাই । কলিকাতায ফিরিবার সময় রাত্রের গাড়িতে ভিড় ছিল;ভালো করিয়া ঘুম হৈতেছিল না - ঠিক চোখের উপরে আলো জ্বলিতেছিল। মনে করিলাম ঘুম যখন হইবে না তখন এই সুযোগে বালকের জন্য একটা গল্প ভাবিয়া রাখি । গল্প ভাবিবার ব্যর্থ চেষ্টার টানে গল্প আসিল না , ঘুম আসিয়া পড়িল । স্বপ্ন দেখিলাম , কোন এক মন্দিরের সিঁড়ির রক্তচিহ্ন দেখিয়া একটি বালিকা অত্যন্ত করুন ব্যাকুলতায় তাহার বাপকে জিজ্ঞাসা করিতেছে - বাবা,একি ! এ যে রক্ত! বালিকার এই কাতরতায় বাপ অত্যন্ত ব্যথিত হইয়া অথচ বাহিরে রাগের ভান করিয়া কোনমতে তার প্রশ্নটাকে চাপা দিতে চেষ্টা করিতেছে। জাগিয়া উঠিয়ায় মনে হইল এটি আমার স্বপনলব্ধ গল্প। এই স্বপ্নটির সঙ্গে ত্রিপুরার রাজা গোবিন্দমাণিক্য এর পুরাবৃত্ত মিশায়ে রাজর্ষি গল্প মাসে মাসে লিখিতে লিখিতে বালকে বাহির করিতে লাগিলাম[]

চরিত্র

[সম্পাদনা ]

গোবিন্দমাণিক্য, পুরোহিত রঘুপতি, হাসি ও তাতা, জয়সিংহ, নক্ষত্ররায়

কাহিনী

[সম্পাদনা ]

উপন্যাস টি একটি কাল্পনিক ঐতিহাসিক উপন্যাস । রাজর্ষি-র জন্য একটি ""সূচনা"" রবীন্দ্রনাথ স্বহস্তে লিখিয়া দিয়াছিলেন, যা নিম্নরূপ:-

<সূচনা> ""রাজর্ষি সম্বন্ধে কিছু বলবার জন্যে অনুরোধ পেয়েছি। বলবার বিশেষ কিছু নেই। এর প্রধান বক্তব্য এই যে, এ আমার স্বপ্নলব্ধ উপন্যাস। বালক পত্রের সম্পাদিকা আমাকে ঐ মাসিকের পাতে নিয়মিত পরিবেশনের কাজে লাগিয়ে দিয়েছিলেন। তার ফল হল এই যে, প্রায় একমাত্র আমিই হলুম তার ভোজের জোগানদার। একটু সময় পেলেই মনটা ‘কী লিখি’ ‘কী লিখি’ করতে থাকে। রাজনারায়ণবাবু ছিলেন দেওঘরে। তাঁকে দেখতে যাব বলে বেরনো গেল। রাত্রে গাড়ির আলোটা বিশ্রামের ব্যাঘাত করবে বলে তার নিচেকার আবরণটা টেনে দিলুম। অ্যাংলোইণ্ডিয়ান সহযাত্রীর মন তাতে প্রসন্ন হল না,ঢাকা খুলে দিলেন। জাগা অনিবার্য ভেবে একটা গল্পের প্লট মনে আনতে চেষ্টা করলুম। ঘুম এসে গেল। স্বপ্নে দেখলুম—একটা পাথরের মন্দির। ছোটো মেয়েকে নিয়ে বাপ এসেছেন পুজো দিতে। সাদাপাথরের সিঁড়ির উপর দিয়ে বলির রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। দেখে মেয়েটির মুখে কী ভয়! কী বেদনা! বাপকে সে বার বার করুণস্বরে বলতে লাগল, বাবা, এত রক্ত কেন! বাপ কোনোমতে মেয়ের মুখ চাপা দিতে চায়, মেয়ে তখন নিজের আঁচল দিয়ে রক্ত মুছতে লাগল। জেগে উঠেই বললুম, গল্প পাওয়া গেল। এই স্বপ্নের বিবরণ ‘জীবনস্মৃতি’তে পূর্বেই লিখেছি, পুনরুক্তি করতে হল। আসল গল্পটা ছিল প্রেমের অহিংস পূজার সঙ্গে হিংস্র শক্তিপূজার বিরোধ। কিন্তু মাসিক পত্রের পেটুক দাবি সাহিত্যের বৈধ ক্ষুধার মাপে পরিমিত হতে চায় না। ব্যঞ্জনের পদসংখ্যা বাড়িয়ে চলতে হল। বস্তুত উপন্যাসটি সমাপ্ত হয়েছে পঞ্চদশ পরিচ্ছেদে। ফসল-খেতের যেখানে কিনারা সেদিকটাতে চাষ পড়ে নি, আগাছায় জঙ্গল হয়ে উঠেছে। সাময়িক পত্রের অবিবেচনায় প্রায়ই লেখনীর জাত নষ্ট হয়। বিশেষ যেখানে শিশু পাঠকই লক্ষ্য সেখানে বাজে বাচালতার সংকোচ থাকে না। অল্পবয়সের ছেলেদেরও সম্মান রাখার দরকার আছে, এ কথা শিশুসাহিত্য-লেখকেরা প্রায় ভোলেন। সাহিত্যরচনায় গুণী-লেখনীর সতর্কতা যদি না থাকে, যদি সে রচনা বিনা লজ্জায় অকিঞ্চিৎকর হয়ে ওঠে, তবে সেটা অস্বাস্থ্যকর হবেই, বিশেষত ছেলেদের পাকযন্ত্রের পক্ষে। দুধের বদলে পিঠুলি-গোলা যদি ব্যাবসার খাতিরে চালাতেই হয় তবে সে ফাঁকি বরঞ্চ চালানো যেতে পারে বয়স্কদের পাত্রে,তাতে তাঁদের রুচির পরীক্ষা হবে; কিন্তু ছেলেদের ভোগে নৈব নৈব চ। শ্রাবণ ১৩৪৭""

এই উপন্যাসে দেখা যায় যে রাজা গোবিন্দমাণিক্য একদা সকাল এ নদীতে স্নান করতে গিয়ে হাসি ও তাতা নামের দুই ভাইবোন এর সাথে দেখা হয়। তার সাথে এই দুই ভাই বোনের অনেক ভাল সম্পর্ক গড়ে ওঠে । একদিন তাদের নিয়ে মহিষবলির পরের দিন বেড়ানোর সময় দেখেন যে নদীর ঘাটে রক্তের দাগ । হাসি জিজ্ঞেস করে ও রক্তের দাগ কিসের? রাজা উত্তর দিতে না পারায় হাসি তার আঁচল দিয়ে নদীর ঘাট মুছতে থাকে। এর পরেই হাসি জ্বরে মারা যায় ও জ্বরের বিকার এ বলতে থাকে "ও রক্তের দাগ কিসের?"। এরপরই রাজা ঘোষণা দেন যে রাজ্যে সব বলি দেওয়া বন্ধ। কিন্তু বাধ সাধে রঘুপতি পুরোহিত ও রাজার বড় ভাই । তারা বলতে থাকে রাজার বলিদান  প্রথা বিলোপের জন্য রাজ্যের অবনতি অবশ্যম্ভাবী। শেষ পর্যন্ত রাজ্য ছাড়া হয় রাজা,তার নতুন পুরোহিত বিল্বন। রাজ্যে রাজা হয় রাজার বড় ভাই । কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভুল বুঝতে পারে রঘুপতি ছুঁড়ে ফেলে দেয় কালীর মূর্তি,বুঝতে পারে নরবলি ও বলিদান ভিত্তিহীন। শেষপর্যন্ত জয় হয় মানবতার। সবাইকে হার মানতে হয় রাজা গোবিন্দমাণিক্য ও বিল্বন এর কাছে। রবীন্দ্রনাথ জয় ঘটান মানবতার।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা ]
  1. সালমা বুক ডিপো এর রবীন্দ্র উপন্যাস সমগ্র ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সংস্করণ হতে গৃহীত

আরও দেখুন

[সম্পাদনা ]

বাংলা সাহিত্য

AltStyle によって変換されたページ (->オリジナル) /