নিকোলাস কোপার্নিকাস
- Afrikaans
- Alemannisch
- አማርኛ
- Aragonés
- العربية
- مصرى
- অসমীয়া
- Asturianu
- Kotava
- अवधी
- Azərbaycanca
- تۆرکجه
- Башҡортса
- Basa Bali
- Boarisch
- Žemaitėška
- Bikol Central
- Беларуская
- Беларуская (тарашкевіца)
- Български
- Bislama
- Brezhoneg
- Bosanski
- Batak Mandailing
- Буряад
- Català
- Нохчийн
- کوردی
- Qırımtatarca
- Čeština
- Чӑвашла
- Cymraeg
- Dansk
- Deutsch
- Zazaki
- Ελληνικά
- English
- Esperanto
- Español
- Eesti
- Euskara
- فارسی
- Suomi
- Võro
- Français
- Nordfriisk
- Frysk
- Gaeilge
- 贛語
- Kriyòl gwiyannen
- Gàidhlig
- Galego
- Avañe'ẽ
- Hausa
- עברית
- हिन्दी
- Fiji Hindi
- Hrvatski
- Hornjoserbsce
- Magyar
- Հայերեն
- Interlingua
- Bahasa Indonesia
- Interlingue
- Ilokano
- Ido
- Íslenska
- Italiano
- 日本語
- Patois
- La .lojban.
- Jawa
- ქართული
- Qaraqalpaqsha
- Taqbaylit
- Kabɩyɛ
- Қазақша
- ಕನ್ನಡ
- 한국어
- Kurdî
- Kernowek
- Кыргызча
- Latina
- Lëtzebuergesch
- Лезги
- Limburgs
- Ligure
- Ladin
- Lombard
- Lietuvių
- Latviešu
- Malagasy
- Minangkabau
- Македонски
- മലയാളം
- Монгол
- मराठी
- Кырык мары
- Bahasa Melayu
- Mirandés
- မြန်မာဘာသာ
- Эрзянь
- Plattdüütsch
- Nedersaksies
- नेपाली
- नेपाल भाषा
- Li Niha
- Nederlands
- Norsk nynorsk
- Norsk bokmål
- Occitan
- Livvinkarjala
- ଓଡ଼ିଆ
- Ирон
- ਪੰਜਾਬੀ
- Kapampangan
- Polski
- Piemontèis
- پنجابی
- پښتو
- Português
- Runa Simi
- Română
- Armãneashti
- Русский
- Русиньскый
- Ikinyarwanda
- संस्कृतम्
- Саха тыла
- ᱥᱟᱱᱛᱟᱲᱤ
- Sardu
- Sicilianu
- Scots
- سنڌي
- Srpskohrvatski / српскохрватски
- Taclḥit
- සිංහල
- Simple English
- Slovenčina
- Slovenščina
- Shqip
- Српски / srpski
- Svenska
- Kiswahili
- Ślůnski
- Sakizaya
- தமிழ்
- తెలుగు
- Тоҷикӣ
- ไทย
- Tagalog
- Türkçe
- Татарча / tatarça
- Українська
- اردو
- Oʻzbekcha / ўзбекча
- Vepsän kel’
- Tiếng Việt
- Volapük
- Winaray
- 吴语
- მარგალური
- ייִדיש
- Yorùbá
- Zeêuws
- 中文
- 文言
- 閩南語 / Bân-lâm-gú
- 粵語
নিকোলাস কোপার্নিকাস | |
---|---|
মিকোলাই কপের্নিক | |
জন্ম | ১৯ ফেব্রুয়ারি, ১৪৭৩ পোল্যান্ড |
মৃত্যু | ২৪ মে ১৫৪৩(1543年05月24日) (বয়স ৭০) |
নাগরিকত্ব | পোল্যান্ড |
মাতৃশিক্ষায়তন |
|
পরিচিতির কারণ | সৌরকেন্দ্রিক মতবাদ |
স্বাক্ষর | |
মিকোলাই কপের্নিক ( লাতিন ভাষায়: Nicolaus Copernicus–নিকোলাস্ কোপের্নিকুস্; তৎকালীন পোলীয় ভাষা: Mikołaj Kopernik মিকল্বাই কপের্নিক্, আধুনিক পোলীয় ভাষা: মিকউয়াই কপর্নিক্ ; ১৯ ফে., ১৪৭৩–২৪ মে, ১৫৪৩ খ্রি.) ছিলেন একজন বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী। তিনি তাঁর নামের লাতিন রূপ অর্থাৎ নিকোলাস কোপার্নিকাস নামেই অধিক পরিচিত। তিনিই সর্বপ্রথম আধুনিক সূর্যকেন্দ্রিক সৌরজগতের মতবাদ প্রদান করেন। যেখানে তিনি পৃথিবী নয়; বরং সূর্যকে সৌরজগতের মূলকেন্দ্র হিসাবে উল্লেখ করেন এবং ১৮শ শতকের আগে এমন একটি মডেল প্রণয়ন করেন, যখন চারদিকে টলেমী ও এরিস্টটলীয় মতবাদ চলছিল।
তার মৃত্যুর কিছুদিন আগে কোপার্নিকাস তার বই (দি রেভলিউসনিবাস অরবিয়াম কোয়েলেস্তিয়াম ) প্রকাশ করা হয়। বইটি বিজ্ঞানের ইতিহাসে বড় একটি ভুমিকা পালন করে। এছাড়াও কোপার্নিকান বিপ্লব সৃষ্টি এবং বৈজ্ঞানিক বিপ্লবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
কোপার্নিকাসের জন্ম ও মৃত্যু একই জায়গায়; রয়েল প্রুশিয়া, যেটি ১৪৬৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত পোল্যান্ড সম্রাজের অন্তর্ভুক্ত ছিল। তিনি একাধারে গণিতবিদ, জ্যোতির্বিদ, পদার্থবিদ, আধুনিক পণ্ডিতবিদ, অনুবাদক, গভর্নর কূটনীতিক এবং অর্থনীতিবিদ ছিলেন। ১৫১৭ সালে তিনি অর্থের একটি পরিমাণ তত্ত্ব বের করেন যাকে অর্থনীতির প্রধান ধারণা বলা যায়। এছাড়াও ১৫১৯ সালে তিনি অর্থনীতির একটি সূত্র প্রদান করেন, যা পরবর্তীতে গ্রিসমের সূত্র নামে পরিচিত।
জীবনী
[সম্পাদনা ]নিকোলাস কোপার্নিকাস ১৪৭৩ সালের ১৯ শে ফেব্রুয়ারি পোল্যান্ড সম্রাজ্যের রয়েল প্রুসিয়া প্রদেশের থর্ন (আধুনিক তোরন) শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা কারাকোর একজন বণিক ছিলেন এবং তার মা ছিলেন তোরনের একজন ধনী বণিকের কন্যা। নিকোলাস চার ভাই বোনের মধ্যে সবার চেয়ে ছোট ছিলেন। তার বড় ভাই এন্দ্রু ফ্রনবার্গের একজন অগাস্টিয়ান কেনন ছিলেন। তার বড় বোনের নাম ছিলো বারবারা, তার মায়ের নামের সাথে মিলিয়ে। তার বোন ছিলো একজন মঠবাসিনী বা সন্নাসী। তিনি ১৫১৭ সালে মারা যান। কোপার্নিকাসের আরেক বোন ক্যাথরিন যিনি কিনা তোরনের ব্যবসায়ী এবং শহরের কাউন্সিলর বার্থেল গার্টনারকে বিয়ে করেন। তাদের পাঁচ জন সন্তান ছিল। কোপার্নিকাস মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার বোনের সন্তানদের দেখাশোনা করেছেন। কোপার্নিকাস কোন বিয়ে করেননি এবং তার কোন সন্তান ছিলো না। তবে ১৫৩১ থেকে ১৫৩৯ সাল পর্যন্ত তার আনা সিলিং নামে এক গৃহকর্মীর সাথে সম্পর্ক ছিলো।
পিতার পরিবার
[সম্পাদনা ]কোপার্নিকাসের পিতার পরিবারের আদিনিবাস ছিল নেয়াসের কাছে সিলেসিয়া নামক একটি গ্রামে। তবে গ্রামের নাম পরবর্তিতে বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন ভাবে পরিবর্তিত হতে থাকে, যেমন- কপার্নিক, কোপার্নিস, কোপের্নিক এবং আজ তা কোপের্নিকি নামে পরিচিত। ১৪ শ শতাব্দীতে পরিবারটি সিলেসিয়া শহর থেকে পোল্যান্ডের রাজধানীর দিকে আসতে শুরু করে। প্রথমে কারাকাও এরপর তারা তোরণে চলে আসে। বাবা নিকোলাস সম্ভবত জনের(দাদা) বড় ছেলে ছিলেন যিনি কারাকাও থেকেই এসেছিলেন।
নিকোলাস নামটি তার পিতার নামেই নামকরণ করা হয় যিনি কিনা তামার ব্যবসায় প্রথমবারেই চমক প্রদান করেছিলেন। যার বেশিরভাগই দানজিগ এলাকাতে বিক্রি হয়। তিনি(কোপার্নিকাসের বাবা) ১৪৫৮ সালে কারাকাও থেকে তোরণে চলে আসেন। তোরন, ভিস্তুলা নদীর তীরে অবস্থিত, যেখানে দীর্ঘ ১৩ বছর যুদ্ধ হয়েছিলো। কারণ, পোল্যান্ড ও প্রাদেশিক কয়েকটি রাজ্য ও পুরুশীয়ান শহরের একটি জোট অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণের জন্য টিউটোনিক আদেশের বিরুদ্ধে লড়াই করছিলো। এই যুদ্ধে হেনসেয়াটিক শহরেগুলোর মত দানজিগ এবং তোরণও পোলিশ রাজাকে(ক্যাসিমির, জাগলোন) সমর্থন করেছিলো, যারা এই শহরের ঐতিহ্য ও স্বাধীনতা রক্ষায় শপথ নিয়েছিলো যা ছিলো টিউটোনিক আদেশের বিরুদ্ধে।
নিকোলাসের বাবাও রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন এবং পোল্যান্ড ও টিউটোনিক আদেশের বিরুদ্ধের শহরগুলোকেও সমর্থন করে যান। ১৪৫৪ সালে তিনি পোল্যান্ডের কার্ডিনাল জাবিগাইড ওলিসনিক এবং পুরুশীয়ান শহরের মধ্যকার যুদ্ধ ঋণ পরিশোধের মধ্যস্থতা করেন। থর্নের দ্বিতীয় পর্বের চুক্তি(১৪৬৬) অনুযায়ী টিউটোনিক আদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে পশ্চিম প্রদেশের সমস্ত দাবী প্রত্যাখান করে। কোপার্নিকাসের বাবা ১৪৬১ হতে ১৪৬৪ সালের মধ্যে জ্যোতিবিজ্ঞানী বারবারা ওয়াটজেনরোদেকে(কোপার্নিসের মা) বিয়ে করেন। ১৪৮৩ সালে তিনি(পিতা) মৃত্যুবরণ করেন।
মাতার পরিবার
[সম্পাদনা ]কোপার্নিকাসের মা(বারবারা ওয়াটজেনরোদে) ছিলেন তোরণের রাজনীতিবীদ এবং শহরের মেয়র লুকাস ওয়াটজেনরোদে ও কাটারজিনা(ক্যাথরিন) এর কন্যা।(এটি ক্যাটারজিনা রুদিগার জেনেট মোদালিবোগ এর সূত্র অনুযায়ী)। মোদালিবোগ ছিল প্রভাবশালী একটি পোলিশ পরিবার। যা ১২৭১ সাল থেকে পোল্যান্ডের ইতিহাসের সাথে জড়িত আছে। ওয়াটজেনোরদে পরিবারটিও কোপার্নিক পরিবারের মতো সিলেসিয়া গ্রামের নিকটবর্তী সুইউনিকা থেকে এসেছিল এবং ১৩৬৩ সাল থেকে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে তরনে। তারা খুব শীঘ্রই ধনী এবং রাজনীতিতে প্রভাবশালী হয়ে উঠে। যদিও ওয়াটজেনোরদে পরিবারটি বিবাহবন্ধনের মাধ্যমে ব্যাপক পরিধি লাভ করে। এই কারণে নিকোলাসের সাথে তোরন, দানজিগ, এলব্লাগের ধনী পরিবার এবং পুরুশীয়ার কাপসজিক, ডিলায়নজিক, কোনোপাকিজ, কোসেলেকিজ উঁচু পরিবারগুলোর সাথে সম্পর্ক ছিল। লিকাস এবং ক্যাথরিনের তিন সন্তান ছিল। জুনিয়র লুকাস ওয়াটজেনরোদে(১৪৪৭-১৫১২) ছিলেন একজন ওয়ার্মিয়া বিশপ, বারবারা ছিলেন জ্যোতির্বিদ। তিনি(বারবারা) মারা যান ১৪৯৫ সালে এবং ক্রিস্টিনা যিনি তোরনের ব্যবসায়ী টিডেমান ভন এলেনকে ১৪৫৯ সালে বিয়ে করেন। ক্রিস্টিনা ১৫০২ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
লুকাস ওয়াটজেনোরদে টিউনিক নাইটের বিরুদ্ধে ছিলে। ১৪৫৩ সালে তিনি গ্রাউডুনেজেব তোরনের প্রতিনিধিত্ব করেন ও তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের পরিকল্পনা করেন। তের বছরের যুদ্ধের সময় তিনি প্রুশিয়ার শহরগুলোকে সমর্থন করেন তার সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য করে এবং পরে তোরন ও দানজিগের রাজনীতিতে সরাসরি যোগদান করেন। তিনি লাসিন এবং মাওবার্কে সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত হন। তিনি ১৪৬২ সালে মারা যান। লুকাস ওয়াটজেনরদে জুনিয়র, কোপার্নিকাসের মামা পৃষ্ঠপোষকতা করেন। তিনি কারাকাও বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। এছাড়াও কলগনে এবং বলগনাতেও পড়ালেখা করেছিলেন। তিনি টিউটরনিকের আদেশের বিরুদ্ধে ছিলেন।
এজন্য তার গ্রান্ডমাস্টার তাকে শয়তান বলে উল্লেখ করেন। ১৪৮৯ সালে তিনি রাজা কাসিমির(৬) এর পছন্দের বিরুদ্ধে ওয়ার্মিয়ার বিশপ নির্বাচিত হন যেখানে রাজা তার নিজের পুত্রকে বসাতে চেয়েছিলেন। তিন বছর পর কাসিমির(৬) এর মৃত্যু পূর্ব পর্যন্ত ওয়াটজেনোরদের ঝগড়া হয়। এরপর ওয়াটজেনোরদে জুনিয়র তিন সফল পোলিশ শাসকের সাথে ভাল সম্পর্ক গড়ে তোলেন। তারা হলেন জন(প্রথম) আলবার্ট, আলেকজান্ডার জাগলিন এবং সিগমুয়েড(প্রথম)। তিনি প্রত্যেক শাসকের খুব ভাল বন্ধু ছিলেন এবং প্রধান উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করেন। তার প্রভাবের ফলে ওয়ার্মিয়া এবং পোল্যান্ডের মধ্যকার সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হয়। তিনি ছিলেন তৎকালীন সময়ের ওয়ার্মিয়ার ধনী এবং প্রভাবশালী ব্যক্তি। তিনি কোপার্নিকাসের শিক্ষাজীবনে এবং কর্মজীবনে অনেক সাহায্য করেন।
ভাষা
[সম্পাদনা ]কোপার্নিকাস ল্যাটিন ও জার্মান ভাষায় সমান দক্ষ ছিলেন। তিনি পোলিশ, গ্রীক এবং ইটালিয়ান ভাষাতেও কথা বলতে পারতেন। তবে তিনি কাজ করেছেন বেশিরভাগ ল্যাটিন ভাষায়। কারণ, তখনকারদিনে ইউরোপের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ল্যাটিন ভাষা ব্যবহৃত হত। এছাড়াও ল্যাটিন, রোমান ক্যাথলিক চার্চে ও পোল্যান্ডের রাষ্ট্রীয় আদালতের প্রধান ভাষা ছিল। আর এভাবেই ল্যাটিন ভাষায় চার্চ এবং পোলিশ শাসকদের সাথে নিকোলাসের যোগাযোগ ছিল। কোপার্নিকাসের লিখা কিছু তথ্য প্রমাণ জার্মান ভাষায়ও আছে। এই বিষয়টি জার্মানির দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মার্টিন ক্যারিয়ার উল্লেখ করেন। কারণ হলো কোপার্নিকাসের স্থানীয় ভাষাও ছিল জার্মান।
কোপার্নিকাস খুব ভালো জার্মান বলতে পারতেন তার অন্যতম কারণ হলো তিনি জার্মান ভাষাভাষী একতি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৪৯৬ সালে তিনি যখন বলগনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছিলেন তখন তিনি জার্মান ভাষার একটি দলে(সংগঠনে) যোগদান করেন। ১৪৯৭ সালের সংবিধান অনুযায়ী এই সংগঠনটির সদস্য তারাই হতে পারতেন যাদের মাতৃভাষা ছিল জার্মান। যাই হোক, ফরাসি দর্শবিদ আলেকজান্দ্রে কোয়রের মতে, কোপার্নিকাস নাটিও সংগঠনে জার্মান ভাষা জানতো বলে যোগদান করেনি বরং সে নিজেকে জার্মান ভাবত তাই যোগ দিয়েছিলো। তখন প্রুশিয়া এবং সিলেসিয়া থেকে নিয়মিত ছাত্র শ্রেনীভুক্ত করা হতো যা জার্মান ভাষাভাষী শিক্ষার্থীতের জন্য জাতিগতভাবে গর্বের ছিলো।
নাম
[সম্পাদনা ]কোপার্নিক হল বংশীয় উপাধি। এই কপার্নিগ নাম ১৩৫০ সালে কারাকাও থেকে সংগ্রহ করা হয়। ১৮৪৫ সালের পূর্বে সিলেসিয়া এর ডিচি অব নাইসা গ্রামের লোকদেরকে কোপের্নিগ বলা হতো। ১৪৯৩ সালে দি নুরেমবার্গ ক্রোনিকল প্রকাশিত হয় যেখানে বলা হয় গ্রামের মানুষের স্থানীত মাতৃভাষা ছিল পোলিশ। ১৩৮৬ সালে নিকোলাস কোপার্নিকাসের প্রপিতামহ কারাকাওতে নাগরিকত্ব লাভ করে বসবাস করতে শুরু করে। বর্তমান কপার্নিকি নামটি মূলত এসেছে জার্মান কপার এবং পোলিশ অর্থ ডিল(কপার) হতে। নিক এবং বহুবচন নিকি যা পোলিশ শব্দে বিশেষ্য হিসেবে কাজ করে। সেই সময়ের মধ্যে সাধারণ হিসাবে, উভয় শীর্ষস্থানীয় এবং উপাধির বানানে ব্যাপকভাবে পরিবরতন হয়েছে। কোপার্নিকাস এসব ব্যাপারে অনেকটা উদাসীন ছিলেন।
তার শৈশবের সময় ১৪৮০ সালে তোরনে একবার তার বাবার নাম নিকোলাস কোপেরনিইগক সংগ্রহ করা হয়। কারাকাওতে তিনি ল্যাটন ভাষায় নিজের নাম নিকোলাস, নিকোলাসে পুত্র নিবন্ধন করেন। ১৪৯৬ সালে তিনি নাটিও জার্মান সংগঠনে তার নাম ডমিনাস নিকোলাস কোপার্নিক নিবন্ধন করেন। পাদুয়াতে তিনি নিজের নাম নিকোলাস কোপার্নিক স্বাক্ষর করলেও পরে তা কোপার্নিকাসে পরিবর্তন করেন। ল্যাটিন ভাষায় Coppericus লিখার সময় তিনি প্রথমে দুইটি "P" ব্যবহার করতেন, কিন্তু পরবর্তীতে তিনি একটি "P" ব্যবহার করেন। তার গ্রন্থ "দি রিভলিউশনিবাস" এর শিরোনামে "নিকোলাই কোপার্নিকি" উল্লেখ করা হয়।
শিক্ষা
[সম্পাদনা ]পোল্যান্ড
[সম্পাদনা ]নিকোলাস কোপার্নিকাসের বাবার মৃত্যুর পর তার মামা লুকাস ওয়াটজেনোরোদের ইয়ং নিজে তার সকল দায়িত্ব নেন এবং তার শিক্ষা ও কর্মজীবনের দায়িত্বও নিজের কাধে তুলে নেন। ওয়াটজেনোরোদে পোল্যান্ডের সকল জ্ঞানীলোকদের সাথে সম্পর্ক রেখেছিলেন এবং তাদের মধ্যে এক বন্ধু ছিলো ইতালিয়ান বংশোদ্ভুত এক প্রভাবশালী ফিলিপ বোনাক্রসি। কোপার্নিকাসের শৈশবের পড়ালেখার কোন প্রমাণাদি পাওয়া যায়নি। তবে কোপার্নিকাসের জীবনী লেখক মনে করেন যে, ওয়াটজেনরোদে তোরনে তাকে প্রথমে সেন্ট জন বিদ্যালয়ে পাঠিয়েছিলেন।
আর্মিটাজের মতে তিনি পরে ক্যাথোড্রল বিদ্যালয়ে ভর্তি হন যা পরবর্তিতে কারাকাও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে সাহায্য করে। ১৪৯৩-৯৪ সালের শীতকালীন সেমিস্টারে তার ভাই এন্ড্রুর সাথে কারাকাও বিশ্ববিদ্যালয় শুরু করেন। কোপার্নিকাস কলা বিভাগে ভর্তি হন (১৪৯১-১৪৯৫)। জান ব্রোজেকের মতে কোপার্নিকাস আলবার্ট ব্রুজসকির(যিনি এরিস্টটলীয় দর্শন এর শিক্ষক ছিলেন) ছাত্র ছিলেন। কোপার্নিকাস তার কারণে জগ ভন পিউবাগাস এর "থিউরিকা নোভা প্লান্টারাম" পড়েছিলেন। তিনি সব ধরনের জ্যোতির্বিদ্যা সম্পর্কিত ক্লাস করতেন। এদের মধ্যে বার্নাড অব বিস্কুপে, ওজচিক ক্রিপা, অন্যতম। এছাড়াও জান অব গ্লোগো, মাইকেল রোকলা, ওজচিকনিউই এবং মারচিন বেলিকার জ্যোতির্বিদ্যার ক্লাসে অংশগ্রহণ করতেন।
কোপার্নিকাসের কারাকাও বিশ্ববিদায়লয় তাকে গাণিতিক জ্যোতির্বিদ্যা সম্পর্কে জ্ঞান দিয়েছিল। এর অধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিলো গণিত, জ্যামিতি, জ্যামিতিক অপটিক্স, মহাজাগতিক, ত্বাত্তিক এবং গণনীয় জ্যোতির্বিদ্যা। এছাড়াও তিনি দর্শন এবং এরিস্টটল ও আহমদ ইবনে রুশদের লিখিত প্রাকৃতিক বিজ্ঞান সম্পর্কে খুব ভালো জ্ঞান লাভ করেন, যা তাকে তার ভবিষ্যত এর কোপার্নিকাস তত্ত্ব তৈরীতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কোপার্নিকাস তার কারাকাও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বিশবিদ্যালয়ের শ্রেনীকক্ষ এবং স্বাধীনভাবে বই পড়ে সকল জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। তিনি ইউক্লিড, হালি আবেনরাগেল, আলফানসে টেবলস, জোহানেস রেজিওমোনটাস সকল মহান ব্যক্তিদের বই পড়ে শেষ করেন। কিন্তু ১৬৫০ সালে সুইডিশ দেলেগু যুদ্ধে এসব নিয়ে কারাকাও থেকে নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে বইগুলো আপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে আছে।
ক্রাকোভ এর চার বছরের জীবনে কোপারনিকাস কঠিন বিভাগীয় অনুষদের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালনে জ্যোতির্বিজ্ঞানের দুটি সরকারি বিষয়ে বিশ্লেষণে শুরু করেন। এর মধ্যে এরিস্টটলের হোমেসেন্ট্রিক তত্ত্ব ও টলেমির তাত্ত্বিক এপিক্স পদ্ধতির বিশ্লেষণ শুরু করেন। এর মাধ্যমে কপারনিকাস কোপারনিকাস নিজের মতবাদ তৈরির জন্য প্রথম ধাপ সৃষ্টি করেছিল যা ছিল মহাবিশ্বের গঠন।
১৪৯৫ সালে ক্রাকোভে পড়ালেখা শেষ না করে হটাৎ করেই মামা ওয়াতজেনরদের কাছে চলে আসেন। তার মামা ১৪৮৯ সালে ওয়ারমিয়ার বিসপ নির্বাচিত হন। অজানা কারণেই ওয়াটজেনোদে তার দুই ভাগিনাকে ইতালির ক্যাননে আইন পরতে পাঠিয়ে দেন। ধারণা করা হয় এতে করে তাদের ভবিষ্যৎ উন্নতি এবং ওয়ারমিয়াতে তাদের প্রভাব বিস্তারের জন্যই এমন করা হয়। ১৪৯৬ সালের মাঝামাঝি তিনি অধ্যাপক চ্যান্সেলর জেরির সাথে ওয়ারমিয়া ত্যাগ করেন যিনি ইতিমধ্যে ইতালি যাচ্ছিলেন। অক্টোবর মাসে তিনি বলগ্নাতে আসেন। এর কয়েকমাস পর ১৪৯৭ সালে তিনি সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধন করেন যেখানে সিলিয়া,প্লিসিয়া ও অন্যান্য জাতীয়তার ছাত্রদের পাশাপাশি পোলিশ ছাত্রদেরও ভর্তি করা হয়।
ইতালি
[সম্পাদনা ]প্রক্সি দ্বারা ১৪৯৭ সালের ২০ অক্টোবর কোপারনিকাসকে আনুষ্ঠানিকভাবে সফল ঘোষণা করা হয়। যদিও ২ বছর আগেই ওয়ারমিয়ার ক্যাননরিতে তিনি সফল হন। ১৫০৩ সালের ১০ জানুয়ারী পাদুয়াতে একটি ডকুমেন্ট এর জন্য তিনি সিলেসিয়ার বহেমিয়াতে একটি চার্চের কর্মভারহীন পদ লাভ করেন। ১৫০৮ সালে ২৯ নভেম্বর তার সফলতার জন্য তাকে আর একটি পদ দেয়া হলেও পরবর্তীতে তার কর্মজীবনে ব্যস্ততার জন্য তিনি এই পদ থেকে সরে যান। এটা স্পষ্ট নয় যে তাকে কখনও যাজক হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো। তবে এডওয়ার্ড রসেন দাবি করেন যে কোপারনিকাস নিজে কখনো যাজক ছিলেন না। তবে তিনি একটি ছোট আদেশ গ্রহণ করেছিলেন। ক্যাথলিক এনসাইক্লোপেডিইয়া প্রস্তাব করে যে ১৫৩৭ সালে নিকোলাস ওয়ারমিয়ার এপিসপালের আসনটির চারজন প্রার্থীর একজন ছিলেন।
১৪৯৬ সালের শেষ থেকে ১৫০১ এর শুরু প্রায় তিন বছর বলগ্নাতে থাকাকালীন সময়ে কোপারনিকাস নিজেকে আইন পরার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেন। তিনি মাত্র ৭ বছরে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। ১৫০৩ সালে তিনি ২য় বারের মত ইতালিতে ফিরে আসেন এবং মানবিক বিভাগ নিয়ে পড়ালেখা শুরু করেন। তিনি সম্ভবত ফিলিপ বেরোওলজে, এন্টোনিও উরসও, কর্ডও, গিওভানি, গারজানি, আলোসান্দ্র অচিলিনের মত শিক্ষকদের বক্তব্য শুনতে শ্রেণীকক্ষে যেতেন এবং পাশাপাশি জ্যোতিবিদ্যাও পড়াশোনা শুরু করেন। তিনি তখনকার বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ডোমেনিকা মারিয়া নভেরা দে ফেরেরার সাথে পরিচিত হন এবং তার সহকারী হিসাবে যোগদান করেন। কোপারনিকাস জর্জ ভন পেয়ারবাখ এবং জহানেস রিজিওমন্তানুস (ভেনিস ১৪৯৬) এর এপিতস অফ দি আলমাগেস্ত বইটি পড়ার মাধ্যমে নতুন ধারণার উন্নতি সাধনের চেষ্টা করেছিলেন। তিনি টলেমীর তত্তের ভিত্তিতে চাদের গতিপথের নির্দিষ্ট বিশ্লেষণ সম্পর্কে তার পর্যবেক্ষণ যাচাই করেন। ১৪৯৭ সালে ৯ মার্চ বলগ্নার আলেদবারনে একটি অলৌকিক ঘটনা লক্ষ্য করেন। সেটি হল চন্দ্র নক্ষত্রপুঞ্জের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র।
কোপারনিকাসের মানবতাবাদী ক্রমবর্ধমান সন্দেহের অন্যতম কারণ হল তিনি গ্রীক এবং ল্যাটিন উভয় লেখকগণের বই ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। (পিথাগোরাস, প্লুটো, সামোস , সিসিরও, ক্লেমেদিস, ফিললাস) যখন তিনি পাদুয়াতে ছিলেন। তিনি প্রাচীন জ্যোতির্বিজ্ঞান , মহাজাগতিক এবং ক্যালেন্ডার সিস্টেম বিভক্ত ঐতিহাসিক তথ্য জেনে জ্ঞান লাভ করছেন।
কোপারনিকাস তার জুবিলি বছর ১৫০০ সাল রোমে কাটিয়েছিলেন। তিনি তার ভাইয়ের সাথে সেখানে আসেন এবং সম্ভবত শিক্ষানিবাস করতে পাপাল কুরিয়াতে ছিলেন। যাইহোক কোপারনিকাস তার জ্যোতির্বিদ্যার কাজ বলগ্নাতে শুরু করেন। উদাহরণসরূপ, ৫-৬ নভেম্বর ১৫০০ সালের একটি চন্দ্রগ্রহণের সূচনা। রেতিকাসের মতে কোপারনিকাস জ্যোতির্বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসাবে নিজ উদ্যোগে অনেকগুলো ছাত্র এবং স্থানীয় অ্যারো কিছু বিজ্ঞানের দক্ষ লোক নিয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানের গাণিতিক সমস্যার সমাধান করেন। তার বলগ্নাতে সংক্ষিপ্ত সময়ের ফেরার যাত্রা কিছুটা অপ্রস্তুত ভাবেই শেষ হয়েছিল। ১৫০১ সালের মাঝামাঝি তিনি ওয়ারমিয়াতে ফিরে আসেন। পরে ২৮ জুলাই , ২ বছর তার ছুটি বৃদ্ধির কারণে মেডিসিনে পরতে আসেন। পরবর্তীতে তিনি রেভেনেরদ এর এবং বিসপ লুকাস ওয়াতজেনরদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা উপদেষ্টা হিসাবে কাজ শুরু করেন। গ্রীষ্মের শেষের দিকে অথবা শীতের শুরুতে তিনি তার ভাই এন্ড্রোর সাথে ইতালিতে ফিরে আসেন। এই সময়ে তিনি চিকিৎসাবিদ্যা নিয়ে পাদুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পরেন। ১৫০৩ এর মে জুন মাসে দর্শন ব্যতীত সকল বিষয়ে পাশ করেন এবং ক্যানন হতে ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেন।
কপারনিকাস পাদুয়া বিশ্ববিদ্যালয় এর কিছু শিক্ষকের অধীনে চিকিৎসা লাভ করেন। এরা হলেন- প্রফেসর বারতালমিও দা মন্তাগানা, গিরলামো, গাব্রিলে জেরবি , আলেসান্দদ্র বেনেদিতি। এছাড়া চিকিৎসা সম্পর্কিত জ্ঞান লাভ করেন ভালেকাস দা তারা নতা, জান মেসেও, হুগো সাঞ্চেস, জান খেতাম, আর্নল্ড দ্যা ভিয়ানভা এবং মাইকেল সাভনারলা। যা পরবর্তীতে তাকে চিকিৎসা শাস্ত্রের গ্রন্থাগারের শুরু করতে সাহায্য করে। এমন একটা বিষয় যা কোপারনিকাসকে অবশ্যই পড়তে হত তা হল জ্যোতির্বিজ্ঞান যা চিকিৎসা বিদ্যার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ। অন্যসব জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের বিপরীতে তিনি কখনও জ্যোতিষ আগ্রহ প্রকাশ করেননি।
বলগ্নাতে কোপারনিকাস শুধুমাত্র তার অফিশিয়াল গবেষণায় নিজেকে সীমিত রাখেননি। এটা সম্ভবত তার পাদুয়ার বছর ছিল যখন তিনি হেলেনিয়কের প্রতি আগ্রহ খুঁজে পেয়েছিলেন। তিনি থিওদরাসের গ্যাঁজের ব্যাকরণ ১৪৯৫ এবং জে বি চারথন্নিয়ার অভিধান এর সাহায্যে নিজেকে পরিচিত করেছিলেন। তিনি প্রাচীনকালের গবেষণার সম্প্রসারণ বলগ্নাতে শুরু করেন। এমনও হতে পারে যে তার পাদুয়াতে থাকার সময় তার ধারনাটি অবশেষে একটি নতুন পৃথিবীকে পৃথিবীর গতিবিধির উপর ক্রিস্তালাইজ করেন। এছাড়াও কোপারনিকাস ১৫০৩ সালে বাড়ি ফেরার সময় তার বিশ্ববিদ্যালয় এর সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।ক্যানন হতে আইনে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভের পর ইতালিতে থেকে ওয়ারমিয়া চলে আসেন।
গ্রহ পর্যবেক্ষণ
[সম্পাদনা ]কোপারনিকাস বুধের তিনটি পর্যবেক্ষণ করেন যার মধ্যে ত্রুটি ছিল ৩,-১৫,১ মিনিট চাপ। তিনি ভেনাসের পর্যবেক্ষণ করেন যার ত্রুটি ছিল -২৪ মিনিট চাপ। মঙ্গলের চারটি পর্যবেক্ষণ করেন করেন যার ত্রুটির মান ছিল ২,২০,৭৭,১৩৭ মিনিট চাপ। জুপিটার পর্যবেক্ষণে ৪ টি ত্রুটি পাওয়া যায় সেগুলো হল ৩২,৫১,-১১ এবং ২৫ মিনিট চাপ। শনির সাথেও ৪ টি পর্যবেক্ষণ ত্রুটি ছিল ৩১, ২০,২৩ এবং -৪ মিনিট চাপ।
কাজ
[সম্পাদনা ]ইতালিতে পড়ালেখা শেষ করে ৩০ বছরের কোপারনিকাস আবার ওয়ারমিয়াতে ফিরে আসেন যেখানে জীবনের বাকি ৪০ বছর কাটিয়েছিলেন। এছাড়াও কারাকও এবং পুরুসিয়ান শহরগুলির আসে পাশে ঘুরেবেরিয়ে ছিলেন। এদের মধ্যে ছিল – তোরণ , দানেস্ক, এল্বলাগ, গ্রুদজিয়াজ, মাল্বরক, কনিসবারগ। ওয়ারমিয়ার রাজপুত তখন দেশে স্বায়ত্তশাসন ভোগ করছিলো। কারণ দেশের নিজস্ব খাদ্য , অর্থ , এবং ধন সম্পদ একই ছিল । অন্যান্য অংশেও একইরকম অবস্থা ছিল।
কোপারনিকাস ছিলেন তার মামার প্রধান সচিব এবং চিকিৎসক ১৫০৩- ১৫১০ পর্যন্ত, তার মামার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। তিনি হেলিসবারগের বিসপদের দুর্গেই বাস করতেন সে সময় যেখানে তিনি তার হেলিওসেন্ত্রিক তত্তের উপর কাজ শুরু করেন। তিনি তার মামার কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক সকল ধরনের দায়িত্ব পালন করতে শুরু করেন । ১৫০৪ সালের শুরুর দিকে ওয়াতজেনরদেকে জটিল এবং কূটনৈতিক কাজে সাহায্য করেন মাল্বরকে এনং এল্বলাগের ব্যাপারে। তিনি দব্রিজকি এবং হাইদুকিজ লিখেন। যেখানে পোলিশ সমরাজ্যের প্রতি সম্মান রেখে উচ্চাকাঙ্ক্ষী রাজনীতিবিদদের জন্য প্রুসিয়া এবং ওয়ারমিয়ার হয়ে রক্ষণাত্মক ভুমিকা পালন করেন।
১৫০৪-১৫১২ সালের মধ্যে কোপারনিকাস তার মামার অনুসারী হিসাবএ যাত্রা করেন। ১৫০৪ সালে পোল্যান্ডের রাজা অ্যালেক্সান্ডার এর উপস্থিতিতে তিনি প্রুসিয়ান অধিবেশনএ যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি মাল্বরকে ১৫০৬, এল্বারগে ১৫০৭,স্তুমে ১৫১২ তে যোগ দেন। এছাড়াও তিনি পোল্যান্ডের পূর্ব রাজা সিগিমুন্দ এর অনুষ্ঠান ও প্রসেন অধিবেশনে অংশগ্রহণ করেন। তার মামা ওয়াতজেনরদে তাকে ১৫০৯ সালে সকল অধিবেশনে নিজ নিজ প্রতিনিধিত্ব করার প্রস্তাব করেন। কোপারনিকাস পরবর্তীতে তাহার ৭ম শতকের বাইজানটান ইতিহাস এবং ৮৫ টি কবিতা গ্রিক থেকে ল্যাটিনে অনুবাদ করে তা ছাপানোর জন্য জান হোলের ছাপাখানায় দেন। কবিতাগুলো মুলত গ্রিক কাহানী নিয়ে নির্মিত হয়।
এগুলো মুলত ৩ টি ভাগে বিভক্ত ছিল। ১) নীতিকথা – এখানে মানুষকে উপদেশ দেয়া হয় কীভাবে জীবনযাপন করতে হয়। ২) মেষপালক এর জীবনসংক্রান্ত – এখানে মেষপালকের জীবন নিয়ে আলোচনা করা হয়। ৩) কৌতুকপূর্ণ- এখানে ভালোবাসার কবিতার কথা বলা হয়েছে। এগুলোর একটার পর একটা চক্রাকারে বিষয়গুলো মিল রেখে করা হয়। কোপারনিকাস গ্রিক থেকে ল্যাটিনে গল্পের অনুবাদ করেন। যার নাম দেন থিওপিলাক্তি স্কলাস্তি সিমকাতি এপিস্তলয় মোড়াল। যা তিনি তার মামার নামে উৎসর্গ করেন। কারণ তিনি তার জীবনের সবচেয়ে বেশি কিছু তার মামার কাছ থেকেই লাভ করেন। এই অনুবাদ দারা কোপারনিকাস নিজেকে মানবতাবাদী হিসাবে প্রকাশ করেন এবং গ্রিক সাহিত্যর পুন্রজিবিত করার প্রশ্ন করেন। কোপারনিকাস প্রথমে গ্রিক কাব্য রচনা করেছিলেন। যার নাম ছিল এপিগ্রাম। তিনি কারাকও ভ্রমণের সময় সম্ভবত করেছিলেন।
তিনি ১৫১২ সালে রাজা ১ম জিগ্মুন্দ এবং বারবারা জাপয়লার বিয়ের সময় এটি প্রকাশ করেন। ১৫১৪ সালের কিছু আগে কোপারনিকাস হেলিওসেন্ত্রিক তত্তের একটা প্রাথমিক বর্ণনা লিখেন যার শিরোনাম ছিল নিকলায় কপারনিকি দ্যা হায়পথিসিবাস মতাম কইলেস্তিয়াম এ সে কন্সতিতিউতে কমেন্তারিওলাস-সংক্ষেপে কমেন্তারিওলাস। এটি মহাবিশ্বের সূর্যকেন্দ্রিক প্রকিয়ার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা ছিল, কোন গাণিতিক বিশ্লেষণ ছিল না। তবে দ্যা রেভলিউসন বইয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ জ্যামিতিক বর্ণনা ছিল। যদিও এটি পৃথিবীর গতি সংক্রান্ত অনুমান এর উপর ভিত্তি করা হয়ে ছিল। তিনি সামান্য কয়েক কপি ছাপিয়ে ছিলেন এবং তা শুধুমাত্র কারা কও এর জ্যোতির্বিদদের সাথে আলোচনা করেন। দ্যা কমেন্তারিওলাস পূর্ণরূপে ১৫৭৮ সালে ছাপানো হয়।টাইকো ব্রাহে কোপারনিকাস এই তত্ত্বটি পরেন কিছু তথ্য সংগ্রহ করেন যা ব্রাহের বই অ্যাস্ট্রোনমিয়ে ইন্সতাওরাতে প্রগিম্নাস তে ব্যবহার করে। ব্রাহের বইটি ১৬০২ সালে প্রকাশিত হয়।
১৫১০-১৫১২ সালের মধ্যে কোপারনিকাস চলে আসেন। বাল্টিক সাগরের উত্ত্অরের একটি ছোট শহর। ১৫১২ সালের এপ্রিলে তিনি অয়ারমিয়াতে নির্বাচনে অংসগ্রহণ করেন। ১৫১২ এর জুনে সরকার তাকে ব্যাথাড্রল পর্বত এ বাসা প্রদান করে যা ছিল যাহা ছিল সম্পূর্ণ বাহির থেকে প্রতিরক্ষামূলক। পরে তিনি ফর্মবোরকের দুর্গের উত্তর পশ্চিমের টাওয়ার ক্রয় করেন। তিনি তার জীবনের শেষের দিকের সময় গুলো এখানেই ব্যয় করেছেন। তবে তার এইখাখাঙ্কার গবেষণার কাজ এ ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি নস্ট হয়ে যায় ।
পরবর্তীতে ১৫১৩-১৬ সাল পর্যন্ত এখানেই তিনি জতিরবিদ্যার কাজ করেন। পরে ১৫২২-৪৩ পর্যন্ত অন্য এক জায়গায় কাজ করেন।ফোরবারকে কোপারনিকাস ৬০ টিরও বেশি জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ক পর্যবেক্ষণ করেন।কোপারনিকাস জীবনের শেষ সময় ফর্মবোরকে থাক্লেও ১৫১৬ থেকে ১৫১৯ এবং ১৫২০-২১ সেখানে ছিলেন না। কোপারনিকাস তখন ওয়ারমিয়াসে চলে যান।ওয়ারমিয়াতে অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক কাজ করেন যা তাকে রাজনৈতিক জীবনের সাথে সংযুক্ত করে। তখন অয়ারমিয়ায় কঠিন সময় যাচ্ছিল এবং পোলিস্ট টিউটোনিক যুদ্ধ শুরু হয়।যুদ্ধের সময় অয়ারমিয়াতে থেকে দেশের পক্ষে যুদ্ধ করেন এবং প্রতিপক্ষের সাথে সমজতাইয় যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে পোলিশ মুকুট পুনরুধার এবং অর্থনীতি চাংগা করেন। এসবের কারণে সরকার তাকে তার মামার মতই বিশ্বাস করেন এবং তার মামার মৃত্যুর পর অয়ারমিয়র বিশপ হিসেবে তাকে নিযুক্ত করেন । একই বছরে তাকে অরথমন্ত্রানালয়ের মেজিস্ট্রেট হিসেবে যুক্ত করা হয়। ১৫১২-১৫ সালের মধ্যে প্রশাসন য় অর্থ মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে নিযুক্ত থাকলেও তিনি তাহার নিজের কাজের প্রতি কোন অবহেলা করেন নি।১৫১৫ সালের মধ্যে তিনি চারবার সূর্যের পর্যবেক্ষণ করেন এবং এবং পৃথিবীর দূরত্ব এবং অবস্থান নির্ণয় করেন। ১৫১৫-১৯ সালের মধ্যে তিনি তিনি তার কাজ গুলো পুনরাবিত্তি করেন। তিনি তার পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তিনি জুলিয়ান ক্যলেন্ডর তৈরি করেন।
১৫১৬-২১ সালের মধ্যে অয়ারনিয়ার প্রধান অর্থনীতি প্রশাসক ছিলেন তবে এর মধ্যে আনোন্সটেন মেহলাসকও অন্তরভুক্ত ছিল । তিনি ওয়ারমিয়াতে আশে পাশের অঞ্চলগুলো ভ্রমণ করেন এবং সেখানকার অর্থনৈতিক অবস্থা এবং কৃষকদের অবস্থা বিবেচনা করে (লোকেশন অফ ডেসারটেড ফাঈফ) নামক একখানা পাণ্ডুলিপি প্রদান করেন। পোলিশ টীঊটোনিক যুদ্ধের সময় টীঊটোণীক রাজ্য ওয়ারমিয়াতে প্রভাব বিস্তার করলে সেনাবাহিনীর সাথে ওয়ারমিয়াতে পক্ষে যুদ্ধে করেন এবং পোলিশ পক্ষে সমর্থন করেন এবং সমঝোতার মাধ্যমে শান্তিচুক্তি করেন। ১৫২০ সালে পোলিশ সম্রাজে অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হয় এবং পুরুসিয়ান রাজা সেজামিক কোপারনিকাসকে এই সমস্যা সমাধানের জন্য সাহায্য চান। তিনি টাকার মূল্যর উপর বেশ পড়ালেখা করেন এবং একটি তত্ত্ব প্রদান করেন যা পরবর্তীতে গ্রিসমের সুত্র নামে পরিচিত হয়।
এছাড়াও ১৫০৭ সালে টাকার তত্ত্ব বের করেন। যা বর্তমানে অর্থনীতিতে ব্যাপক জনপ্রিয়। কোপারনিকাস এর তৈরি সেই তত্ত্ব পুরুসিয়া এবং পোল্যান্ড এর অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ব্যাপক ভুমিকা পালন করে। ১৫০৩ সালে জন উইডমান্সটার গোপনে পোপ ৭ম ক্লেমেন্ট এর কাছে কোপারনিকাস এর হেলিওসেন্ত্রিক তত্তের বর্ণনা প্রদান করেন। এতে পোপ খুশী হয়ে উইডমাণশটারকে মূল্যবান উপহার সামগ্রী প্রদান করেন। ১৯৩৫ সালে বানারড ওয়াপোশকী ভিয়েনা এক ভদ্রলোকের চিঠি প্রদান করেন। সেখানে তিনি আল্মানাক বা বর্ষপুঞ্জি প্রকাশের জন্য অনুরোধ করেন। আল্মাক হল কোপারনিকাসের বর্ষপঞ্জি। ওয়াপস্কি অবশ্য তার লিখার ভেতর কোপারনিকাস তত্তের বিবরণ প্রদান করেন তবে দুঃখের বিষয় হল যে ওয়াপস্কির অনুরোধের কোন উত্তর পাওয়া যায় নি কারণ এই চিঠি পাঠানোর কয়েক সপ্তাহের পরেই তিনি মারা যান।
১৫৩৭ সালে ওয়ারমিয়ার বিসপ মওরিটিয়াস ফারবের মারা গেলে কোপারনিকাস জহানেস ডেণ্টিকাসের উত্তরসূরি হিসাবে নির্বাচনে অংশ নেন । কোপারনিকাস ছিলেন নির্বাচনের চার জন প্রার্থীর একজন। আসলে তার প্রার্থিতা ছিল কিছুটা রিতি অনুযায়ী, ডেণ্টিকাসের অবশ্য আগেই বিসপ হবার কথা ছিল এবং তিনি পোল্যান্ড এর রাজা ১ম সিগিস্মুন্ড এর সমর্থক ছিলেন। প্রথম দিকে কোপারনিকাসের সাথে নতুন বিসপের সম্পর্ক ভাল ছিল এবং ১৫৩৮ সাল পর্যন্ত তার চিকিৎসাও করেন। কিন্তু ঐ বছরের বসন্তে হঠাৎ করে বিসপের সাথে এক্তা সন্ধেহের সৃষ্টি হয় যার কারণ কোপারনিকাসের গৃহকর্মী আনা সিলিং । যাকে ডেণ্টিকাস ১৫৩৯ সালে ফর্মবারগ থেকে বহিস্কার করেন।
কোপারনিকাস প্রাথমিক জীবনে তার মামার চিকিৎসা করতেন , এছাড়াও ভাই এবং অন্যান্যদের সেবা করেছেন। এরপর তিনি ওয়ারমিয়ার বিসপদের চিকিৎসা করতে শুরু করেন। জহানেস ডেণ্টিকাস, মওরিটিয়াস ফারবারদের মত বিসপরা তার কাছ থেকেই চিকিৎসা নিতো। এসব বড় বড় ব্যক্তিদের চিকিৎসা করার সময় অবশ্য আর কিছু চিকিৎসকের সাথে এসব ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করতেন। তাদের মধ্যে আলবার্ট ডুকে ছিলেন অন্যতম।
১৫৪১ সালের দিকে ডূকে আলবার্ট টিঊটোনিক আদেশের মাধ্যমে প্রাক্তন গ্র্যান্ড মাষ্টার যিনি টিঊটোনিক নাইটের সন্ন্যাসী অংশের লুথ্রান এবং বংশজাত রাজ্যে পরিণত হন। তার চাচা পোল্যান্ডের রাজা সিসিগমুন্ডের কাছে স্রধা নিবেদন করেন। বিসপ কুহেন্মিক অসুস্থ হলে কোপারনিকাস তার সাথে দেখা করতে যান। ডুকে ছিলেন সেই বিসপের চিকিৎসক , কোপারনিকাস বুঝতে পারেন ডুকে খারাপ লোক ছিলেন না।
কোপার্নিকাস জানতো যে আলবার্ট খারাপ মানুষ ছিল না, তাদের অনেক বুদ্ধিমত্তা প্রায়ই সমান ছিল। তখন কোপার্নিকাস ও ডুকে একসাথে কাজ করার আবার অনুমতি পায়। এক মাসের মাথায় তাদের রোগী সুস্থ হয়ে উঠে এবং কোপার্নিকাস পুনরায় ফর্মবার্কে ফিরে আসে। কিন্তু, তিনি নিয়মিত কুনহিমের স্বাস্থ্যের খবর নিতেন চিঠির মাধ্যমে এবং চিঠির মাধ্যমেই স্বাস্থ্য উপদেশ দিতেন।
কোপার্নিকাসের কিছু বন্ধু তার বিরুদ্ধে আপত্তিকর কথা বলা শুরু করে, তবে তিনি কোন ধরনের প্রতিউত্তর করেন নি। উইলিয়াম গানাপিয়াস একজন ডাচ রিফিউজি তাকে নিয়ে একটি ল্যাটিন ভাষায় কমেডি করেন। সেই কমেডিটি একটি স্কুলে প্রদর্শন করেন। সেখানে দেখানো হয় কোপার্নিকাস একজন অহংকারী তবে শান্ত প্রকৃতির লোক যে কিনা নিজেকে ঈশ্বরের সাথে তুলনা করে। কোপার্নিকাসের মৃত্যুর আটবছর পর ১৫৫১ সালে তার বন্ধু ডুকের পৃষ্টপোষকতায় জ্যোতির্বিজ্ঞানী ইরাসমুসের রিনহোল্ড প্রকাশিত হয়। প্রুশীয়ান টেবিলে কোপার্নিকাসের কাজ ভিত্তিক জ্যোতির্বিদায়গত একটি সেট। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ও তাদের পূর্বসূরীদের পরিবরতে এটি দ্রুত গ্রহণ করেছিল।
হেলিওসেন্ট্রি সম
[সম্পাদনা ]কোপার্নিকাস তার আদর্শ, চিন্তা-ভাবনা, কাজের একটি সারাংশ তৈরী করেন যা তার বন্ধুরা সহজেই পড়তে ও জ্ঞান অর্জন করতে পারে। ১৫১৪ সালে তিনি এই হেলিওসেন্ট্রিকের প্রাথমিক ধারণা দেন। এর মধ্যে ৭ টি ধারণা ছিলো। তিনি পরবর্তিতে আরও কাজ করেন এবং তথ্য ও ডাটা সংগ্রহ করেন। ১৫৩২ সালে তিনি তার "দি রিভিউলিসানবাস ওরবিয়া কেলেসটিয়াম" এর কাজ শেষ করেন। তার কাছের বন্ধুদের আপত্তি থাকা স্বত্তেও তিনি তার বইটি সবার জন্য উম্মুক্ত করতে চান। ১৫৩৩ সালে জন আলবার্ট ইউডমান্সটার রোমে কোপার্নিকাস ত্বত্তের ধারাবাহিক বক্তব্য দেন। পোপ ক্লেমেন(সপ্তম) এবং ক্যাথোলিক কার্ডিনাল এতে খুশী হন এবং এই ত্বত্তের উপর আগ্রহ প্রকাশ করেন।
১৫৩৩ সালের ১ নভেম্বর কার্ডিনাল নিকোলাস রোম থেকে কোপার্নিকাসের নিকট একটি চিঠি প্রদান করেন-
কয়েক বছর আগে আমি আপনার কাজ সম্পর্কে অবগত হয়েছি। সে সময় থেকেই আমি অনেক দুঃখ পেয়েছি কারণ আমি জেনেছি আপনি অন্যসব প্রাচীন জ্যোতির্বিদদের মতো নন। আপনি ভিন্ন কিছু করছেন, নতুন কিছু করছেন। আপনি বলেছেন পৃথিবী ঘুরছে সূর্যের চারিদিকে যা মহাবিশ্বের কেন্দ্র। আমি আপনার কাছ থেকে এসব শিখেছি জনাব। যদি আপনার অসুবিধা না হয় তাহলে আপনার এই আবিষ্কারগুলো জ্যোতির্বিদদের কাছে পাঠান এবং আপনার লেখাগুলো একত্র করে আমার কাছে পাঠান। এরপরই ইউরোপের শিক্ষিত লোকের কাছে কোপার্নিকাসের কাজ পৌছুতে থাকে। কোপার্নিকাসে এরপরও তার বইটি প্রকাশ করতে দেরী করেন। তার অন্যতম কারণ ছিলো তিনি তৎকালীন সমাজের অবস্থা সম্পর্কে ভীত ছিলেন। বিদ্বান, পণ্ডিত লোকেরা কোপার্নিকাসের দর্শন ও জ্যোতির্বিদ্যা সম্পর্কে ভিন্ন মত পোষন করেন এবং তিনি ধর্মীয় দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন ছিলেন।
বই
[সম্পাদনা ]কোপার্নিকাস তখনও তার বই " দি রিভ্লিউশন ওরিবিয়াম কোলেসটিয়াম" এর কাজ করছিলেন। তখন জর্জ জোয়াকিম রেকটাস ও গাণিতবীদ ইডিটেনবার্গ ফর্মবার্গে পৌছায়। ফিলিপ মেলাকন রেকটাসের আগমনের জন্য কয়েকজন জ্যোতির্বিদ এবং এই বিষয়ে আলোচনার ব্যবস্থা করেন। রেকটাস ছিলেন কোপার্নিকাসের একজন ছাত্র। রেকটাস কোপার্নিকাসের সাথে দুই বছর ছিলেন এবং একটি বইও লিখেন "নারাসিও প্রাইমা" যাকে কোপার্নিকাসের ত্বত্তের সূচিপত্র বলা যেতে পারে। ১৫৪২সালে রেকটাস, কোপার্নিকাসের দ্বারা একটি ত্রিকোনমিতিক বই প্রকাশ করেন(এটি পরে কোপার্নিকাসের বইয়ের ১৩ ও ১৪ তম অধ্যায়ে সংযুক্ত করা হয়)।
রেকটাসের সাহায্যে ও চাপে কোপার্নিকাস তার বইটি টিডেমান গিসেকে(কুলমের বিশপ) দেন। তিনি রেটিকাসের কাছে বইটি ছাপানোর জন্য জার্মান মুদ্রাকর জন পিটারসের কাছে পাঠান। এই ছাপাঘরটি ছিলো নুরামবার্গে, জার্মানি। বইটি ছাপার কাজ শুরু হলে রেটিকাসকে নুরামবার্গ ত্যাগ করতে হয়। রেটিয়াস এই কাজ তখন আন্দ্রেস ওসেন্দ্রিয়ারের কাছে সমর্পন করে যান। ওসেন্দ্রিয়া, কোপার্নিকাসের কাজের পিছে কিছু অনুমোদনহীন এবং স্বাক্ষরবিহীন সূচনা যোগ করে দেন। তিনি বলেন যে- অনেকের অনুসিদ্ধান্ত এক হতে পারে এবং অনুসিদ্ধান্ত সবসময় সত্য হতে হবে এমন কোন কথা নেই।
মৃত্যু
[সম্পাদনা ]১৫৪২ সালের শেষের দিকে কোপার্নিকাস হঠাত প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত হন এবং ২৪ শে মে, ১৫৪৩ সালে ৭০ বছর বয়সে মারা যান। তার মৃত্যু কিছুদিন আগে তিনি তার বইয়ের সর্বশেষ সংস্করন প্রকাশ করেন এবং তার সকল কাজের বিদায়ী শুভেচ্ছা দেয়া হয়। ধারণা করা হয়- তিনি কোমাতে হঠাত হৃদযন্ত্রের ব্যাথা অনুভবে জেগে উঠেন এবং তার বইটি দেখেন এরপর শান্তিতে মৃত্যুবরণ করেন।
কোপার্নিকাসকে দর্মবার্গ ক্যাথোড্রোলে কবর দেয়া হয়। যেখানে মহান এই ব্যক্তিকে অনেক জ্যোতির্বিদ প্রায় ২ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে খোজ করেন কিন্তু তার কবরের সন্ধান লাভ করতে ব্যার্থ হন। ১৮০২,১৯০৯,১৯৩৯ এবং ২০০৪ সালে কয়েকবার তার কবর খুজে পাবার চেষ্টা চালানো হয় তবে তা কেউ খুজে পায় নি। এরপর ২০০৫ সালে ১ টি প্রত্নতত্ত্ব দলের প্রধান জেরী গাসোসকি ক্যথোড্রোলের ভূমিতে খুটিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ২০০৮ সালের ৩ নভেম্বর অবশেষে কোপার্নিকাসের কবরকে খুজে পাওয়া যায়। কাসোসকি বলেন যে, এটি কোপার্নিকাসের কবর। তিনি শতভাগ নিশ্চিত হয়েছিলেন।
ফরেনসিক বিভাগের অভিজ্ঞ ক্যাপ্টেন দারিউক জাজদেন ফরেনসিক গবেষণাগারে মাথার খুলি, ভাঙ্গা নাক এসব পরীক্ষা করেন। এই অভিজ্ঞ ক্যাপ্টেন মাথার খুলি পরীক্ষা করে নিশ্চিতভাবে বলেন যে, এটি কোপার্নিকাসের কঙ্কাল কারণ এটি ৭০ বছর বয়সে মারা যাওয়া একটি কঙ্কাল। কোপার্নিকাসের কবরটির অবস্থা খুবই খারাপ ছিল, তার কঙ্কালের কিছু অংশ পাওয়া যায় নি। তার হাড়ের ডিএনএ গবেষণা করে দেখা যায় এর সাথে কোপার্নিকাসের পুরো মিল।
সেই নমুনাটি বর্তমানে সুইডেনের আপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে রাখা হয়েছে। ২০১০ সালে ২২ মে দ্বিতীয়বারের মতো কোপার্নিকাসের অন্তোস্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয় পোল্যান্ডে। ফর্মবার্গের ক্যাথোড্রোল থেকে কোপার্নিকাসের কঙ্কালের অংশবিশেষ সংগ্রহ করা হয়। তার কবর কালো গ্রানাইট পাথর দিয়ে চিহ্নিত করা হয় এবং সেখানে বলা হয় যে কোপার্নিকাস হেলিওসেন্ট্রিক ত্বত্তের জনক। তার কবরের পাশে কোপার্নিকাস মডেল, সূর্য ও ৬ টি গ্রহের প্রদর্শন করা হয়েছে।
কোপার্নিকাস পদ্ধতি
[সম্পাদনা ]ফিলোলাস তার জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত পদ্ধতিতে মহাবিশ্বের কেন্দ্রে সুর্যের পরিবর্তে আগুন কল্পনা করেন এবং এর চারিদিকে পৃথিবী, চন্দ্র, গ্রহ এবং তারা ঘুরছে। হেরাক্লিডেস পনটিকাস(৩৮৭-৩১২ খৃষ্টপূর্ব) প্রস্তাব করেন পৃথিবী তার নিজের কেন্দ্রে ঘুরছে। আবিস্টারকাস সামোস হলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি কিনা প্রথম হেলিওসেন্ট্রিক ত্বত্ত্ব প্রদান করেন। তবে তিনি তার কাজের সবকিছু হারিয়ে ফেলেন। তবে আর্কিমিডিসের বইয়ে (দি স্যান্ড রকনার) পড়ে হেলিও সেন্ট্রিক মডেলের নীতি উন্নতি করেন। থমাস হেড আর্কিমিডিসের বইয়ের ইংরেজি অনুবাদ করেন। সেখানে বলা হয়-
তুমি এখন পৃথিবীর কেন্দ্র সম্পর্কে সচেতন, পৃথিবীর ও সুর্যের ব্যাসার্ধ সম্পর্কে জানো। এটা খুব সাধারণ সকল জ্যোতির্বিদদের জন্য কিন্তু সামোস যে বইটি নিয়ে আসেন তা এই মহাবিশ্বের জন্য অনেক কিছু। তার অনুসিদ্ধান্ত দ্বারা চন্দ্র, সুর্যের অবস্থান, পৃথিবী সুর্যের ঘূর্ণন, চন্দ্র, সুর্য ও পৃথিবীর দুরত্ব বের করা সম্ভব।
কোপার্নিকাস মূলত সামোসের অনুলিপি থেকেই নিজের চিন্তাধারার সুত্রপাত করে করেন। তার বই তে প্রতমে এই উল্লেখ করেন তবে তার শেষ সংস্করণে তিনি তা মুছে ফেলেন।
কোপার্নিকাসের পিথারোগাসের পদ্ধতি ব্যবহার করেন পৃথিবীর অবস্থা নির্ণয়ের জন্য। পিথারোগাসের পদ্ধতি এরিস্টটলের আগেই উল্লেখ করা করেছিলেন। কোপার্নিকাস সামোসের "দি এক্সপেন্ডিস এট ফাজেনডিস রিবাস" একটি কপি জর্জিয়াও ভালার কাছে থেকে সংগ্রহ করেন। যেখানে সামোসের হেলিওসেন্ট্রিক তত্ত্বের বর্ণনা ছিলো। কোপার্নিকাস তার বইয়ের জন্য নিজেকে উতসর্গ করেন। এই নিয়ে মানুষের মন্তব্যের কোন ধরনের তোয়াক্কা করেননি। তিনি তার পর্যবেক্ষণ এবং কাজ চালিয়ে যান। কোপার্নিকাস এই হেলিওসেন্ট্রিক তত্ত্বের কিছু গাণিতিক ব্যাখ্যা দুজন মুসলিম জ্যোতির্বিজ্ঞানী "নাসির আল-দ্বীন আল তুসি" এবং "ইবনে আল শাতিরের" জিওসেন্ট্রিক মডেল থেকে সংগ্রহ করেন। তিনি সঠিকভাবে অনেক ধ্রুবক, গ্রহের পথ, সৌরজগতের নক্ষত্রের গতির ব্যাখ্যা দেন।
মারাগা পর্যবেক্ষণে "নিজাম আল দ্বীন আল খাজিনি আল খতিব" তার "হিকমাহ আল আইন" বইয়ে হেলিওসেন্ট্রিক মডেলের বেশ কিছু অনুসিদ্ধান্ত দেন কিন্তু পরে তা পরিত্যক্ত হয়। "খতীব আল দ্বীন সিরাজী"ও এই তত্ত্ব নিয়ে মতবাদ দেন কিন্তু তাও গ্রহণ করা হয় নি। ইবনে আল শাতির একটি জিওসেন্ট্রিক মডেল প্রদান করেন যা তুসি কাপলা এবং উর্দিলিমা নামে পরিচিত। যা কোপার্নিকাস মডেলের সাথে অনেক মিলে গিয়েছিলো পরবর্তীতে। নিলাকান্ত সোমায়জি(১৪৪৪-১৫৪৪) তার আরায়াভাটিয়াবাসাতে হেলিওসেন্ট্রিক জাতীয় একটি মডেল প্রদান করেন। সেখানে সূর্যের চারিদিকে গ্রহ ঘুরছে। ১৬ শতাব্দীতে টাইকব্রাহে গ্রহের অবস্থানের মডেল প্রদান করেন। কোপার্নিকাসের সময় টলেমির মডেল ছিলো ব্যাপক জনপ্রিয়। সেখানে পৃথিবী কেন্দ্র এবং চারিদিকে সব গ্রহ ঘুরছে। সবাই তখন টলেমির মডেলকেই আদর্শ হিসাবে বিবেচনা করত।
কোপার্নিকাস
[সম্পাদনা ]কোপার্নিকাসের প্রধান কাজ হেলিওসেন্ট্রিক তত্ত্ব যা তার বই "দি রিভিউলশনিবাস ওরিবিয়াম কোলেস্টিয়াম" এ তার মৃত্যুর আগে প্রকাশ করেন ১৫৪৩ সালে। যদিও তিনি ১৫১০ সালে গাণিতিকভাবে তত্ত্বটি তৈরী করেন। কোপার্নিকাসের হেলিওসেন্ট্রিক তত্ত্বের সারাংশ নিম্নে দেয়া হল।
- - মহাবিশ্বের কেন্দ্র বলে কিছু নেই।
- - পৃথিবীর কেন্দ্র মহাবিশ্বের কেন্দ্র নয়।
- -- প্রতিটি গ্রহ উপগ্রহের মধ্যবিন্দু সূর্য, তাই সূর্যই মহাবিশ্বের কেন্দ্র।
- - সূর্য থেকে মহাকাশের উচ্চতা পর্যন্ত পৃথিবীর দূরত্ব অনুপস্থিত(মহাবিশ্বের বাইরের সর্বোচ্চ মহাজাগতিক তল) সূর্য থেকে পৃথিবীর ব্যাসার্ধের দুরত্বের তুলনায় এতো ছোট যে পৃথিবী থেকে সূর্য পর্যন্ত দুরত্ব স্থল উচতার তুলনায় অপ্রত্যাশিত।
- --মহাবিশ্বের গতির কোন নতুন আবির্ভাব হয় না। পৃথিবী তার উপাদানগুলোর সাথে একটি নির্দিষ্ট গতিতে ঘুরতে থাকে।
- - আমরা যা দেখতে পাই তা আসলে সূর্যের গতি নয়, আমরা পৃথিবীর ও এর উপগ্রহের গতিপথ লক্ষ্য করতে পারি।
- - গ্রহ উপগ্রহের গতি পৃথিবী থেকেই উৎপন্ন। তাই পৃথিবীর গতি বর্ণনা স্থলে কোন বিন্দুর গণনা করার প্রয়োজন হয় না।
কোপার্নিকাসের "দি রিভ্লিউশনিবাস" বইটি ৬ টি ভাগে বিভক্ত ছিলো-
- - প্রথম পর্ব- এতে ছিলো হেলিওসেন্ট্রিক তত্ত্ব ও মহাবিশ্বের সারমর্ম
- - দ্বিতীয় পর্ব- জ্যোতির্বিদ্যা নীতি এবং তারার তালিকা প্রকাশ করা হয়
- - তৃতীয় পর্ব- এটাতে বিষুবরেখা এবং সূর্যের গতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে
- - চতুর্থ পর্ব- এখানে চাঁদ ও উপগ্রহের বর্ণনা দেয়া হয়েছে
- - পঞ্চম পর্ব- কীভাবে তারার অবস্থান এবং অন্যান্য ৫ টি গ্রহের অবস্থান নির্ণয় করা যায়।
- - ষষ্ঠ পর্ব- এখানে গ্রহের অক্ষাংশ এবং দ্রাঘিমাংশ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা ]- ↑ ডঃ হুমায়ুন আজাদ (২০০০ খ্রিস্টাব্দ)। মহাবিশ্ব। ওসমান গণি। পৃষ্ঠা ৩১। আইএসবিএন 984 401 569 3। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ "Wasshuber, Andreas or Georg Andreas"। Benezit Dictionary of Artists। Oxford University Press। ২০১১-১০-৩১।
- ১৪৭৩-এ জন্ম
- ১৫৪৩-এ মৃত্যু
- জ্যোতির্বিজ্ঞানী
- অর্থনীতিবিদ
- গণিতবিদ
- বহুশাস্ত্রজ্ঞ
- পোলীয় ব্যক্তি
- পাদুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- বোলোনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- জাগিলোনিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- পোলীয় গণিতবিদ
- পোলীয় অর্থনীতিবিদ
- ১৫শ শতাব্দীর পোলীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী
- ১৬শ শতাব্দীর পোলীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী
- অ্যাঙ্গলিকান সাধু
- জার্মান অর্থনীতিবিদ
- জার্মান দার্শনিক