মানকালীর ঢিবি
মানকালীর কুন্ড | |
---|---|
স্থানীয় নাম ইংরেজি: মানকালীর কুন্ডধাপ | |
মানকালীর কুন্ডধাপ | |
ধরন | প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন |
অবস্থান | মহাস্থানগড় |
অঞ্চল | বগুড়া |
নির্মিত | সুলতানী আমল |
পরিচালকবর্গ | বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর |
মালিক | বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর |
মানকালীর কুন্ড ঢিবি বা মনকালীর কুন্ডধাপ বগুড়া জেলার মহাস্থানগড়ে অবস্থিত বাংলাদেশের একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান।[১] ষাটের দশকের শুরুর দিকে তৎকালীন পাকিস্তান প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর (বর্তমান বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর) এটিকে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান হিসেবে নথিভুক্ত করে।
ইতিহাস
মহাস্থানগড়ের ভেতর যে সমস্ত প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া যায় তার মধ্যে মানকালী কুন্ড ঢিবি উল্লেখযোগ্য। এটি মহাস্থানগড়ের মজা পুকুরের পূর্বপাড়ে অবস্থিত। ১৯৬৫-৬৬ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে এখানে খননকাজ শরু হয় ও শেষ পর্যন্ত সুলতানি আমলের একটি মসজিদের ধ্বংসাবশেষসহ বেশ কিছু ছোট ছোট প্রত্নতাত্ত্বিক বস্তু আবিষ্কার করা হয়।
মসজিদটির আয়তন ২৬.২১ থেকে ১৪.৫৪ মিটার। খনন কাজ চলার সময় মসজিদের নিচে একটি মন্দিরেরও কিছু ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গিয়েছিল। মসজিদটিতে কোন শিলালিপি পাওয়া যায়নি তবে মসজিদের অবকাঠামো দেখে প্রত্নতত্ত্ববিদগণ ধারণা করেন এটি খুব সম্ভবত মুঘল আমলের পূর্বেই নির্মাণ করা হয়েছিল।
মানকালীর ঢিবির পাশে একটি ছোট জলাশয় রয়েছে ও জলাশয়টি থেকে ঢিবিটি দেখতে উঁচু মনে হওয়ায় এটি কুন্ড বা (কূপ) নামে পরিচিত। দুটি মিলে এই স্থাপনাকে মনকালীর কুন্ডধাপ নামে ডাকা হয়। কিংবদন্তি অনুসারে, এই স্থানে প্রথমে একটি মন্দির নির্মাণ করেন রাজা মানসিংহ ও তার ভাই তানসিংহ। অন্যান্য কিংবদন্তি অনুসারে, এখানে মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন ঘোড়াঘাটের জমিদারগণ এছাড়াও এখানে পাওয়া জৈন প্রতিমা দেখে অনেকেই মনে করেন পূর্বে জৈন ধর্মগুরুদের আবাসস্থল ছিলো স্থানটি।
মসজিদ ছাড়াও এখানে আবিষ্কৃত হওয়া অন্যান্য জিনিসের মধ্যে রয়েছে উত্তরাঞ্চলীয় কালো চকচকে মৃৎপাত্রের খণ্ডাংশ, কিছু শুঙ্গযুগের পোড়ামাটির ফলক, একটি জৈন প্রতিমা, ব্রোঞ্জের গণেশ ও গরুড় মূর্তি ও কিছু অলঙ্কৃত ইটের ভগ্নাংশ থেকে পাওয়া গেছে। এগুলো থেকে অনেক প্রত্নতত্ত্ববিদই ধারণা করেন এখানে আবিষ্কৃত মন্দিরটি পালযুগে নির্মিত।
অবকাঠামো
উত্তর-দক্ষিণে লম্বা মসজিদের দেওয়ালগুলো ১.২ মিটার থেকে ১.৫১ মিটার পর্যন্ত পুরু। মসজিদের পশ্চিম দেওয়া অর্ধাগোলাকারভাবে নির্মিত পাঁচটি মেহরাব রয়েছে ও মেহরাব বরাবর পূর্ব দেয়ালে রয়েছে পাঁচটি দরজা। কেন্দ্রীয় মেহরাবটি নকশাকৃত ও অন্য সবগুলোর চেয়ে আকারে বড়। অভ্যন্তরে জ্যামিতিক আকারে নির্মিত মসজিদটি ২ সারি স্তম্ভে- লম্বালম্বিভাবে তিন খণ্ডে ও আড়াআড়িভাবে পাঁচ খণ্ডে বিভক্ত।
কেন্দ্রীয় মেহরাবসংলগ্ন উত্তর দিকে ছিলো ১.৭৭ ও ১.৫ মিটার আয়তনের একটি উঁচু মিনার বা ভাষণ মঞ্চ। এছাড়াও মসজিদের ভেতর ১.৫ মিটার থেকে ০.২২ মিটার উঁচু তিনটি বেদির অস্তিত্ব রয়েছে সেগুলো অনুমানিক ইমামের সাহায্যকারী মোকাব্বরের জন্য তৈরি করা হয়েছিলো। মসজিদের পূর্ব দেওয়াল সংলগ্ন পূর্বদিকে ৭.৫৭ মিটার প্রশস্ত একটি উন্মুক্ত অঙ্গন ছিলো বলে ধারণা করা হয়।
চিত্রশালা
তথ্যসূত্র
- ↑ মোঃ আইয়ুব খান (২০১২)। "মানকালীর কুন্ডধাপ"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।