দ্রাবিড়বিদ্যা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
০৬:০২, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
দ্রাবিড়বিদ্যা (ইংরেজি: Dravidian studies) হলো দ্রাবিড় ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির জন্য নিবেদিত কেতাবি ক্ষেত্র। এটি তামিলবিদ্যার সুপারসেট এবং ভারতবিদ্যার উপসেট।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন ]
প্রাথমিক ধর্মপ্রচারক
[সম্পাদনা ]ষোড়শ থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীর ধর্মপ্রচারক যারা তামিল ব্যাকরণ বা লেকসিকা লিখেছেন তাদের মধ্যে রয়েছে হেনরিক হেনরিকস, বার্থোলোমাস জিগেনবালগ এবং কনস্ট্যান্টাইনে জিউসেপ বেসচি।
দ্রাবিড়বিদ্যাবিদ | আলোকচিত্র | সময়কাল | কার্যকলাপ |
---|---|---|---|
হেনরিক হেনরিকস | ১৫২০–১৬০০ | পর্তুগিজ জেসুইট যাজক ও ধর্মপ্রচারক। গোয়াতে তার প্রাথমিক দিনগুলির পর তিনি তুতিকোরিনে চলে যান। ধর্মপ্রচারক হিসেবে তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে ধর্মীয় মতবাদের বই স্থানীয় ভাষায় হওয়া উচিত। তাকে প্রথম ইউরোপীয় তামিল পণ্ডিত বলে মনে করা হয়। তিনি প্রথম তামিল প্রেস স্থাপন করেন এবং তামিল লিপিতে বই ছাপান। তামিল লিপিতে মুদ্রিত প্রথম বইটি ছিল "থম্বিরন বনক্কম" (তামিল: தம்பிரான் வணக்கம்) (১৫৭৮), পর্তুগিজ "মতবাদ ক্রিশ্চিয়ানা" এর ১৬-পৃষ্ঠার অনুবাদ। এইভাবে, তামিল প্রথম অ-ইউরোপীয় ভাষা হয়ে ওঠে যা ছাপাখানায় ছাপা হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন ] | |
কনস্ট্যান্টাইনে বেসচি যাকে বীরামমুনিভারও বলা হয় (তামিল: வீரமாமுனிவர்) | ১৬৮০ –১৭৪২ | ইতালীয় জেসুইট যাজক এবং তামিল ভাষার বিখ্যাত কবি। বেশ কয়েকটি তামিল অভিধান লিখেছেন: "চতুরাকারতি" (তামিল: சதுரகராதி), তামিল-ল্যাটিন এবং ল্যাটিন-তামিল-পর্তুগিজ অভিধান সহ। তিনি তিরুবল্লুবর (১৭৩০) এর বিখ্যাত তিরুক্কুরাল মহাকাব্যটি ল্যাটিন ভাষায় অনুবাদ করেছেন। তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ হলো "থেমবানি" (তামিল: தேம்பாவணி) (অবিবর্ণ মালা), সন্ত যোষেফের জীবনের উপর কবিতা।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন ] | |
বার্থোলোমাস জিগেনবালগ | ১৬৮২–১৭১৯ | লুথেরান পাদরি সদস্য এবং ভারতে প্রথম ধার্মিক ধর্মপ্রচারক। তিনি ছিলেন প্রথম প্রতিবাদী ধর্মপ্রচারকদের মধ্যে যারা ১৭০৬ সালে ত্রঙ্কেবর ডেনিশ উপনিবেশে ভারতে এসেছিলেন। তিনি তামিল ভাষায় পুরাতন ও নতুন বাইবেল অনুবাদ করেছেন। ১৭০৮ সালে তিনি "বিবলিওথেকে মালাবারকে" সংকলন করেন, যে ১৬১টি তামিল পুস্তক তিনি পড়েছিলেন এবং সেগুলোর বিষয়বস্তু বর্ণনা করেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন ] |
দ্রাবিড় ভাষার প্রকল্প
[সম্পাদনা ]দ্রাবিড় ভাষাগুলি ১৮১৬ সালের ইন্দো-ইউরোপীয় সময়কাল থেকে পৃথক জাতিগত মাত্রা ছিলো বলে স্বীকৃতি এবং ফোর্ট সেন্ট জর্জ কলেজে মাদ্রাজের সমাহর্তা ফ্রান্সিস হোয়াইতে এলিস উপস্থাপন করেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন ]
ঊনবিংশ শতাব্দীর বিশেষজ্ঞগণ
[সম্পাদনা ]ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্রাবিড়বিদ্যায় অবদানকারীরা হলেন:
দ্রাবিড়বিদ্যাবিদ | আলোকচিত্র | সময়কাল | কার্যকলাপ |
---|---|---|---|
ফ্রান্সিস হোয়াইতে এলিস | ১৭৭৭–১৮১৯ | সরকারি কর্মচারী। প্রথমে দ্রাবিড় ভাষার পরিবারের প্রস্তাব। | |
চার্লস ফিলিপ ব্রাউন | ১৭৯৮–১৮৮৪ | দক্ষিণ ভারতীয় ভাষায় (এখন চেন্নাই লাইব্রেরি সহ) হাতে লেখা ২,১০৬টি পুস্তক সংগ্রহ করেছেন। তিনি তেলেগু ভাষার জন্য তিনটি পরিষেবা প্রদান করেছিলেন: তিনি তেলুগুতে নিজের রচনা তৈরি করেছিলেন; তিনি পুনরুদ্ধার করেন এবং পুরানো তেলুগু রচনা আবিষ্কার করেন; এবং তিনি তেলেগু ভাষায় বই মুদ্রণ করেছিলেন। তিনি ইংরেজিতে তেলুগু রচনার অসংখ্য অনুবাদ রচনা করেছেন। | |
রবার্ট ক্যাল্ডওয়েল | ১৮১৪–১৮৯১ | ভাষা এবং দ্রাবিড় অঞ্চলের ইতিহাস নিয়ে গবেষণা। | |
হারম্যান গুন্ডার্ট | ১৮১৪– ১৮৯৩ | মালয়ালম ব্যাকরণ পুস্তক, "মালায়ালাভাষা ব্যাকরণম" (১৮৫৯) এবং মালায়লাম-ইংরেজি অভিধান (১৮৭২) লেখক। বাইবেল অনুবাদ সহ তেরোটি মালায়ালাম পুস্তক প্রকাশিত হয়েছে। | |
ফার্দিনান্দ কিটেল | ১৮৩২–১৯০৩ | কন্নড় ভাষা এবং ১৮৯৪ সালে প্রায় ৭০,০০০ শব্দের প্রথম কন্নড়-ইংরেজি অভিধান। | |
বেঞ্জামিন লুইস রাইস | ১৮৩৭–১৯২৭ | তাঁর কাজের জন্য বিখ্যাত এপিগ্রাফিয়া কার্নাটিকা যেটিতে পুরাতন মহীশূর এলাকায় পাওয়া প্রায় ৯০০০টি শিলালিপি নিয়ে তাঁর অধ্যয়ন রয়েছে। তিনি ১৮৯৪ থেকে ১৯০৫ সালের মধ্যে দশ বছরে বারোটি খণ্ড প্রকাশ করেন। তিনি এপিগ্রাফিয়া কর্নাটিকার অন্তর্ভুক্ত শিলালিপি থেকে "দ্য হিস্ট্রি অফ মাইসোর অ্যান্ড কুর্গ" লিখেছেন। | |
উত্তমধনপুরম ভেঙ্কটসুবাইয়ের স্বামীনাথ আইয়ার | ১৮৫৫–১৯৪২ | শাস্ত্রীয় তামিল সাহিত্য সম্পর্কিত ৯১টি পুস্তক। ৩,০৬৭টি কাগজ এবং তাল-পাতার পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ করা হয়েছে। | |
টি. আর. সেশা আয়েঙ্গার | ১৮৮৭–১৯৩৯ | দ্রাবিড় বিশেষজ্ঞ তাঁর "দ্রাবিড় ভারত" বইয়ের জন্য বিখ্যাত। | |
কল্লিদাইকুড়িছি আইয়্যা নীলকান্ত শাস্ত্রী | ১৮৯২–১৯৭৫ | প্রখ্যাত দ্রাবিড়তত্ত্ববিদ এবং প্রখ্যাত ঐতিহাসিক। দক্ষিণ ভারতের ইতিহাস নিয়ে ২৫টি ঐতিহাসিক রচনা লিখেছেন। | |
পিল্লাইপুন্ডগুড়ি থিরুভেঙ্গাদত্তইয়াঙ্গার শ্রীনিবাস আয়েঙ্গার | ১৮৬৩–১৯৩১ | বিংশ শতাব্দীর প্রখ্যাত দ্রাবিড় বিশেষজ্ঞ। তামিল এবং ভারতীয় ইতিহাসের উপর অসংখ্য রচনা লিখেছেন। | |
সাক্কোত্তাই কৃষ্ণস্বামী আয়ঙ্গার | ১৮৭১–১৯৪৬ | ১৯২০-এর দশকে "জার্নাল অফ ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি" ঘুরে দাঁড়ানোর এবং চালানোর জন্য তাঁর কাজের জন্য বিখ্যাত। তিনি দক্ষিণ ভারতীয় এবং ভারতীয় ইতিহাসের উপর অনেক ঐতিহাসিক রচনা লিখেছেন। | |
কোরাডা রামকৃষ্ণাইয়া | ১৮৯১–১৯৬২ | মৌলিক গুরুত্বের ২৬টি রচনা লিখেছেন এবং তেলুগুতে গবেষণার সীমানা প্রসারিত করেছেন। | |
বিষ্ণমপেট আর. রামচন্দ্র দীক্ষিতর | ১৮৯৬–১৯৫৩ | তামিল এবং ভারতীয় ইতিহাসের উপর অসংখ্য রচনা রচনার জন্য পরিচিত। |
বিংশ শতাব্দীর বিশেষজ্ঞগণ
[সম্পাদনা ]বিংশ শতাব্দীর দ্রাবিড়বিদ্যায় অবদানকারীরা হলেন:
দ্রাবিড়বিদ্যাবিদ | আলোকচিত্র | সময়কাল | কার্যকলাপ |
---|---|---|---|
মুর্রয় বার্নসন ইমেনিউ | ১৯০৪–২০০৫ | টমাস বুর্রোব এর সাথে লেখা "দ্রাবিড় ব্যুৎপত্তিগত অভিধান" (১৯৬১) তার কাজের জন্য বিখ্যাত। ইমেনিউ দ্রাবিড় পরিবারের কম পরিচিত ভাষা অধ্যয়ন করে - টোডা, বডাগা, কোলামি ও কোটা। ইমেনিউকে ভাষাবিজ্ঞানের আঞ্চলিক ঘটনাগুলির অধ্যয়নের জন্যও কৃতিত্ব দেওয়া হয়, তার মূল নিবন্ধ, "ভারত ভাষাগত অঞ্চল হিসাবে" | |
টমাস বুর্রোব | ১৯০৯–১৯৮৬ | তাঁর রচনা "দ্রাবিড় ব্যুৎপত্তিগত অভিধান" (১৯৬১) এর জন্য বিখ্যাত, যা মারে বার্নসন ইমেনিউর সাথে লেখা। সংস্কৃতে তার রচনার জন্যও পরিচিত। | |
কামিল জেভেলিবিল | ১৯২৭–২০০৯ | ভারতীয় সাহিত্য এবং দ্রাবিড় ভাষাতত্ত্বে চেক পণ্ডিত। দ্রাবিড় ভাষাতত্ত্ব এবং তামিল সাহিত্যের উপর অসংখ্য পুস্তকের লেখক। | |
ভদ্রিরাজু কৃষ্ণমূর্তি | ১৯২৮–২০১২ | বিশিষ্ট দ্রাবিড়বাদী এবং তাঁর প্রজন্মের অন্যতম সম্মানিত ভারতীয় ভাষাবিদ। দ্রাবিড় ভাষাতত্ত্বের অধ্যয়নে তাঁর কাজ "দ্য দ্রাবিড় লাংগুয়েজ" যুগান্তকারী ভলিউম হিসাবে বিবেচিত হয়। তার রচনা "তেলেগু ভারবাল বেস" (১৯৬১) তুলনামূলক দ্রাবিড় ধ্বনিতত্ত্বের প্রথম ব্যাপক বিবরণ। তিনি এই বিষয়ে তেলেগু এবং ইংরেজিতে অসংখ্য রচনার লেখক। | |
ইরাবথাম মহাদেবন | ১৯৩০–২০১৮ | তামিল-ব্রাহ্মী লিপির পাঠোদ্ধার বিষয়ে তার কাজের জন্য বিখ্যাত। তিনি সিন্ধু লিপির সংগ্রহও প্রকাশ করেছিলেন এবং দ্রাবিড় অনুমানের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। |
সমসাময়িক কার্যক্রম
[সম্পাদনা ]অন্ধ্রপ্রদেশের কুপ্পম-এ দ্রাবিড় বিশ্ববিদ্যালয় পশ্চিমা এবং দ্রাবিড় পণ্ডিতদের নামে চেয়ার তৈরি করেছে যাতে পৃথক দ্রাবিড় ভাষায় গবেষণার পাশাপাশি তুলনামূলক দ্রাবিড় অধ্যয়নকে উৎসাহিত করা যায়:[১]
- দ্রাবিড়বিদ্যার জন্য বিশপ ক্যাল্ডওয়েলের সভাপতির পদ
- তেলুগুবিদ্যার জন্য চার্লস ফিলিপ ব্রাউনের সভাপতির পদ
- কন্নড়বিদ্যার জন্য ফার্দিনান্দ কিটেলের সভাপতির পদ
- তামিলবিদ্যার জন্য কনস্টানটাইনে বেসচির সভাপতির পদ
- মালয়ালমবিদ্যার জন্য হারম্যান গুন্ডার্টের সভাপতির পদ
সাহিত্য
[সম্পাদনা ]- রবার্ট ক্যাল্ডওয়েল, Comparative Grammar of Dravidian Languages (১৮৫৬; সংশোধিত সংস্করণ ১৮৭৫)।
- ভদ্রিরাজু কৃষ্ণমূর্তি (২০০৩)। The Dravidian Languages। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস। আইএসবিএন 0521771110। [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ ]
- টমাস আর. ট্রটম্যান, Languages and nations: the Dravidian proof in colonial Madras, ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি প্রেস, ২০০৬।
- মুর্রয় বার্নসন ইমেনিউ (১৯৯৪)। Dravidian Studies: Selected Papers। মতিলাল বেনারসীদাস। আইএসবিএন 8120808584।
চলচ্চিত্র
[সম্পাদনা ]২০২১ সালের ভারতীয় তথ্যমূলক চলচ্চিত্র ড্রিমিং অফ ওয়ার্ডস নজাট্টেলা শ্রীধরনের জীবন ও কর্মকে চিহ্নিত করে, যিনি চারটি প্রধান দ্রাবিড় মালায়ালাম, কন্নড়, তেলেগু এবং তামিল ভাষাকে সংযুক্ত করে বহুভাষিক অভিধান সংকলন করেছিলেন।[২] [৩] [৪] চারটি রাজ্য জুড়ে ভ্রমণ এবং ব্যাপক গবেষণা করে, তিনি এই বহুভাষিক অভিধান তৈরি করতে পঁচিশ বছর[৫] কাটিয়েছেন।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা ]- ↑ Dravidian University fellowships, The Hindu, Saturday, Aug 26, 2006
- ↑ "82-year-old Kerala man's Dictionary is in the four Dravidian languages. 25 long years to compile"।
- ↑ "83-YO Kerala School Dropout Creates Unique Dictionary in 4 South Indian Languages"। ৩১ ডিসেম্বর ২০২০।
- ↑ Sajit, C. p. (৩০ অক্টোবর ২০২০)। "For Keralites, door opens to three other Dravidian languages"। The Hindu।
- ↑ "The Man Who Wrote A Dictionary In Four Languages - Silver Talkies"। silvertalkies.com।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা ]- Dravidian studies in the Netherlands, IIAS newsletter (2005) [১] [২]
- Extracts from T.R.Sesha Iyengar's "Dravidian India" by Dr. Samar Abbas, Bhubaneshwar, 4/8/2003
- Literary Contributions of select list of Tamil Scholars from Overseas
- Roja Muthiah Research Library